নবী সুলায়মান (আ) কে আল্লাহ এমন এক সাম্রাজ্য দান করেছিলেন যা অন্য কোন রাজাকে দেয়া হয়নি। হযরত সুলায়মান (আ) আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা দিয়ে মেঘ ও বাতাসকেও নিয়ন্ত্রণ করেতে পারতেন। তিনি জাদুচর্চা বা জ্বীনদের উপাসনা করেন নি। আল্লাহ জ্বীনদের নবী সুলায়মান (আ) এর অনুগত করে দিয়েছিলেন যারা তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করত। যেমন: এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অল্প সময়ে যাতায়াত করা, মসজিদ তৈরি করা ইত্যাদি।
আল্লাহ বলেছেন: “আর সকল শয়তানকে তার(নবী সুলায়মান আ) অধীন করে দিলাম অর্থাৎ, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী।” (সূরা ছোয়াদ: ৩৭)
একটি কাহিনী প্রচলিত আছে যে নবী সুলায়মান (আ) এর একটি আংটি ছিল যা পড়লে তিনি দৃশ্যমান জগত থেকে জীনদের অদৃশ্যমান জগতে প্রবেশ করতে পারতেন, পশুপাখির কথা বুঝতে পারতেন। একবার নবী সুলায়মান (আ) তার সেই আংটি তার অধীনস্থ ও বিশ্বস্ত এক সঙ্গীর কাছে দিয়ে গোসলখানায় যান, তখন এক শয়তান নবী সুলায়মান-এর বেশে হাজির হয়ে সেই সঙ্গীর কাছ থেকে সুলায়মান নবীর আংটি নিয়ে নিজের আঙুলে পড়ে।তারপর সেই শয়তান সুলায়মান (আ) এর সিংহাসনে বসে নিজেকে রাজা সুলায়মান বলে দাবি করে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেনঃ “অনুরূপভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু স্থির করেছি – মানুষ-শয়তান ও জ্বীন-শয়তান”। (সূরা আন’আম, আয়াত ১১২)
যখন সত্যিকারের সুলায়মান নবী গোসলখানা থেকে বের হয়ে বুঝতে পারেন তার সিংহাসনে যে বসে আছে সে আসলে শয়তান তখন নবী সবাইকে বললেও সবাই সত্যিকারের সুলায়মান (আ) কে পাগল ভাবে আর শয়তানকে সবাই সুলায়মান রাজা হিসেবে বিশ্বাস করে। সুলায়মান আ:-এর রূপ ধারণ করা শয়তান রাজ্যশাসন শুরু করে এবং সত্যিকারের সুলায়মান আ: -কে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে। সুলায়মান (আ) এর বেশে সেই শয়তান স্রামাজ্যের মানুষকে জাদুচর্চায় উৎসাহিত করে।
আর তাই কুরআনে আছে, “সুলায়মান (আল্লাহর প্রতি) অবিশ্বাসী ছিল না; অবিশ্বাসী ছিল শয়তান।”
সুলায়মান (আ) এর বেশধারী শয়তান ম্যাজিক শেখানোর কারনে কিছু পাগান- পৌত্তলিক এবং ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে রাজা সুলায়মান শয়তানের (Asmodeus) সাহায্য নিয়ে জাদুচর্চা করত। ইহুদিরা সেই জাদুবিদ্যার বইগুলোকে চর্চা করত।
আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত।…যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ১০২)
পরে সুলায়মান (আ) এর আংটিটি হারিয়ে যায় এবং একটি মাছ তা গিলে ফেলে। সুলায়মান (আ) আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য। সুলায়মান (আ) রাজ্য হারিয়ে সমুদ্রতীরে একাকী বসবাস শুরু করেন এবং এভাবে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়। একদিন এক মৎস্যজীবী তাকে একটি মাছ দেন। তিনি মাছের পেটে এসমে আজমখচিত তার আংটিটি পান। তখন তিনি আবার তার রাজ্য নিজের হস্তগত করেন এবং ওই শয়তান জ্বীনকে একটি বিশেষ পাত্রে আবদ্ধ করে গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সুলায়মান (আ) এর মত সমস্ত নবীকে পরীক্ষা করেছিলেন। সুলায়মান (আ) এর অবর্তমানে শয়তানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ্যের মানুষ জাদুবিদ্যা চর্চা শুরু করেছিল তাই নবী সুলায়মান (আ) আবার ক্ষমতায় এসে রাজ্যের সব জাদুবিদ্যার বই সংগ্রহ করে লুকিয়ে রাখেন তার সিংহাসনের মাটির নিচে এবং তিনি রাজ্যের জাদুচর্চাকারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার আদেশ করছিলেন। আর সেসময় কিছু অমুসলিমরা বিশ্বাস করত নবী সুলায়মান (আ) জাদুচর্চার মাধ্যমে জ্বীনদের নিয়ন্ত্রণ করতেন যা সত্যি নয়। নবী সুলায়মানের মৃত্যুর পর আবার রাজ্যে সেসব জাদুবিদ্যা চর্চা শুরু হয়।
সেসব জাদুবিদ্যার বই তারপর বংশপরম্পরায় বিভিন্ন secrect society তে প্র্যাকটিস করা হত। প্রশ্ন হল আংটিটি এখন কার কাছে?