দেখতে দেখতে রমজান একেবারে শেষ প্রান্তে। আমরা কেউ জানি না আগামী রমজান পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকব কিনা । ইবাদতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো আমাদের দোরগোড়ায় উপস্থিত। বিশেষ করে রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রি গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে সমভিব্যহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা বা ফজর পর্যন্ত। (আল কুরআন, সুরা-৯৭ [২৫] আল কদর)
কদরের রাতে কোরআন নাজিল হয়! এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সাওয়াব দান করে।
রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুলে কদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলো। তবে অনেক আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যায় এবং বুজুর্গানেদ্বীনের মতে ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ সাতাশ তারিখে পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আ’ন্নী।’
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা: কদর, আয়াত: ১-৩)।
এ আয়াতের ব্যাখায় তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
প্রিয় ভাই বোন, রমজানের বেজোড় রাতগুলোতে যেভাবে কাটাবেন সে বিষয় আমার পক্ষ কিছু পরামর্শ,দিয়ে আজকের আলচনা শেষ করবো।ওমা তাওফিক ইল্লা বিল্লাহ।
(খাবার)
★ বেজোড় রাত গুলোতে ইফতারিতে হালকা খাবার খাবেন। কোন অবস্থায় ভাজাপোড়া খাবেন না।তা না হলে আপনি ইবাদত শান্তি পাবেন না। চাইলে মেনু হিসেবে ইফতারিতে দই চিড়া খেতে পারেন।
★ প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন,পুষ্টিকর খাবার খাবেন খেজুর, দুধ ডিম খেতে পারেন।
ইবাদাত শুরু করবেন যেভাবে:
★ ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ইস্তেগফার এবং দুরুদ বেশি বেশি পড়বেন।অবশ্যই ইফতারি সামনে নিয়ে মুনাজাত করবেন একাকী মোনাজাত করলে ভালো হয়। মনে রাখবেন ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়।
★মাগরিবের সালাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করবেন, তারাবির সালাতের আগে পরিমাণ মতো পুষ্টিকর খাবার খাবেন। তারাবির সালাতের পরে কুরআনের ফজিলতপূর্ণ অংশ থেকে কিছু সময় তেলাওয়াত করবেন।
★ যদি রাতে ঘুমাতে হয়,তবে অবশ্যই ২ রাকাআত করে ৪ রাকাআত, হাজতের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবেন! দোয়া কবুলের জন্য, নিজের চাওয়া পাওয়ার জন্য একটা সুন্দর মোনাজাত করবেন।
★ রাতের ৩.০০ মধ্যে ঘুম থেকে উঠবেন, উঠে ফ্রেশ এক গ্লাস পানি খাবেন। তার পরে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। ৩.০০ থেকে ৩.৪০ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের অর্থবোধক সূরাগুলো দিয়ে সালাদ আদায় করবেন।
শেষ ২০ মিনিট ১০০ বার ইস্তেগফার ১০০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন, তার পরে সুন্দর করে মোনাজাত করবেন, নিজের চাওয়া পাওয়া গুলোর জন্য, পরিবারের জন্য, প্রিয় মানুষগুলোর জন্য।আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের জন্য। অবিবাহিত হলে ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গীর জন্য,পিতা-মাতা নিজের সন্তানের জন্য, দাম্পত্য জীবনের জন্য। অবশ্যই, সঠিক ঈমান ও সেহেরের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে ভুলবেন না। সর্বোপরি মুসলিম উম্মার জন্য দোয়া করবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন।
তোমরা রমাদানের শেষ দশ রাতে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। যদি তোমাদের কেউ দুর্বল থাকে কিংবা অক্ষম হয়, তাহলে সে যেন (অন্তত) শেষ সাত রাতে সেটা খুঁজতে অপারগ না হয়।’
সূত্র: সহীহ মুসলিম: ১১৯৫
★ সেহরি শেষ করে বাকি সময় টুকু আড্ডায় মসগুল হবেন না! দ্রুত খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে আসবেন! তার পরে লাইট বন্ধ করে, ইস্তেগপার, অথবা দুরুদ শরিফে নিজের জিব্বাহ ও অন্তরকে ব্যস্ত রাখুন ।হাদিসে এসেছে বান্দা ইস্তেগফার করা অবস্থায় মনে মনে যা চিন্তা করে তার নেক চিন্তা গুলো আল্লাহ কবুল করে।গুনাহ ক্ষমা করে।
আশা করা যায় এ নিয়মগুলো ফলো করলে আপনি,কদরের রাতের যথাযথ হক আদায় করতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।